নাম তার আসিফ।
না, কোনো বিখ্যাত মানুষ না সে।
না-ও কোনো বিশেষ স্বপ্নের রাজপুত্র।
সে একজন ছেলে মানুষ।
আর ছেলেদের জীবন শুরু হয় দায়িত্ব দিয়ে, শেষ হয় ত্যাগ দিয়ে।
সকালে ঘুম ভাঙে না ঘুম ভাঙাতে হয়।
ভোর সাতটায় বাস ধরতে না পারলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হবে। আর এক মিনিট দেরি মানেই সোজা বেতন কাট। কিন্তু মজার কথা, সেই অফিস তিন-তিনটা মাস ধরে বেতন দেয় না।
তবুও আসিফ যায়, যায় কারণ—ঘরে বাজার নেই।
বাসা ভাড়ার মালিক প্রতিদিন ফোন দেয়, দোকানদার বলেও দেয়, “ভাই আর বাকিতে দেয়া যাবে না।”
আসিফ চুপ করে থাকে।
রাতে বাড়ি ফিরলে দরজা খুলে ছোট ছেলেটা বলে, “আব্বু একটা গাড়ি দাও না, টিভিতে যা দেখায়!”
বউ বলে, “আজো বাজার করো নাই? ছেলেকে দুধ দেই কী দিয়ে?”
বাবা-মার মুখে শুনতে হয়, “তুই ভালো চাকরি পেলি না কেন?”
আসিফ চুপ থাকে।
কারণ সে জানে, তার মুখ খোলা মানেই আরও চাপ, আর সে চাপ নেয়ার জন্যই তো এই জন্ম!
বেতন যখন তিন মাস পরে আসে, তখন হাতে ধরা মাত্র এক মাসের টাকা।
এখন প্রশ্ন—এই টাকায় কী করবে?
- বাসার বাকি দিবে?
- দোকানদারকে কিছু পরিশোধ করবে?
- বাজার করবে?
- না ঈদের মার্কেট করবে বউ-বাচ্চার জন্য?
- না বাবা-মার জন্য নতুন একটা পাঞ্জাবি কিনবে?
নিজের কথা মাথায়ই আসে না।
নিজের পুরোনো জুতা ছিঁড়ে গেছে, পাঞ্জাবি রঙ উঠে গেছে—তবুও মনে পড়ে না, কারণ সে তো আসিফ—সে ছেলে মানুষ।
নিজের জন্য ভাবার অধিকারটা তার নেই।
দেনা করতে করতে এক সময় এমন অবস্থা হয়, যে বেতন আসার আগেই সব চলে যায়, আর পকেটে পড়ে থাকে শূন্যতা আর আতঙ্ক।
বন্ধুরা বলে—“ভাই লাইফটা ইঞ্জয় কর।”
সে শুধু হেসে বলে—“ইনশাআল্লাহ করবো। বাচ্চা বড় হোক আগে।”
কেউ জানে না, রাতে ঘুমের ভেতরেও তার টেনশন চলে আসে।
চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, মালিক ফোন দিচ্ছে, দোকানদার খারাপ গলায় বলছে, “ভাই কবে দিবেন?”
আসিফদের জীবনে স্বপ্ন নেই—আছে শুধু সময়ের সাথে দৌড়।
একটা না একটা সমস্যা মাথায় ঘোরে, একটা গেলে আরেকটা এসে বসে।
শেষ কথা:
আসিফের মত লাখ লাখ ছেলে মানুষ আছে, যারা প্রতিদিন বাঁচে, কিন্তু নিজেদের জন্য না।
তাদের হাসির পেছনে চাপা কান্না, তাদের নিশ্চুপতার পেছনে ঝড়।
তাদের কেউ তালি দেয় না, কেউ বোঝে না—কারণ তারা পুরুষ, আর পুরুষ হলে বুঝি কষ্ট করা লাগে, কিন্তু দেখানো যাবে না।
তবুও তারা হাসে, তবুও তারা বাঁচে—
কারণ তারা জানে,
“এই যুদ্ধ শুধু তার না, এটা তার পরিবারের বাঁচার যুদ্ধ।”
How to create website Bangla tutorial 2025
Leave a Reply